মালেক ইকবাল।।
যাকে সুখ-শান্তির দূত ভাবো, সেই কিন্তু অশান্তিতে আছে, একমাত্র তুমিই শান্তিতে আছো। আর এটাই পরম সত্য। সুখ কী? সুখের কোনও রঙ আছে কি? সুখ কোন অবস্থা নয়, বরং এটা এক মানবিক আর মানসিক অনুভূতি। সুখ মনের এমন এক অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ অথবা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নানা ভাবে, নানা দিক থেকে সুখের সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
জীবন আপনাকে যা দিয়েছে তাকে গ্রহণ করা এবং জীবন যে রকম তাকে সেভাবেই আত্তীকরণ করার যে সামর্থ্য তার মধ্যেই সুখের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে। সুখ বা আনন্দের বিষয়কে আসলে বাঁধাধরা কয়েকটি বাক্যে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। পৃথিবীতে সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের কাছে সুখের সংজ্ঞা সাড়ে সাতশো রকমের। সকলের সংজ্ঞাই অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবগুলো তো আর জানা সম্ভব নয়। তাই সুখের ধরনের সাপেক্ষে এই বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট ছাঁচে আনার জন্যই দার্শনিক ও মনোবিদরা কাজ করে গেছেন।

নিজের সুখকে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা আমাদের কমবেশি সবারই আছে। অন্যকে সুখী ভেবে তার মতো জীবন চালানো বা তার মতো হতে হওয়ায় মধ্যেই আমরা সুখ খুঁজি। এটাই কি আমাদের বড় ভুল নয়? রুপালী জগতের প্রতি আমাদের একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। কিন্তু আমরা জানি না তারা কতটা অসুখী আছে! এক সময় তাহসান-মিথিলাকে সবচেয়ে সুখী এবং রোমান্টিক কাপল ভাবা হতো। কিন্ত এখন? ঢাকার কিং খানের প্রেমের ছবি এবং তার লাইফ স্টাইল দেখে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। তার জীবন সম্পর্কে আরও কি কিছু জানতে চান? নিজের সন্তানকে যখন নিজের কাছে পায় না, এর চেয়ে বড় অশান্তির বিষয় আর কি হতে পারে! এ টি এম শামসুজ্জামান আমাদের সবাই কে হাসায় কিন্তু তিনি হাসতে পারেন কি না? এটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সুশান্ত সিং রাজপুত এর কথা নাই বা বললাম আর! তবে সেলেব্রিটিদের ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম হতে পারে কি না, কে জানে?
অন্য ভাল লাইফ লিড করে, ভাল রেজাল্ট করে এবং ভাল কিছু করে এটা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজের সুখ নষ্ট করার মধ্যে কোন অর্থ নেই। অনেকেই বলতে শুনেছি, আমি খারাপ রেজাল্ট করেছি এতে কষ্ট পাই নাই, কিন্তু ও কেমনে এত ভাল রেজাল্ট করলো, এতে কষ্ট পাইছি। আপনি যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাবেন না। এটা সবচেয়ে সুন্দর কথা। নিজের যা আছে তার তা নিয়ে সব সুখ খোঁজার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। অন্যকে মানদণ্ড কল্পনা করল সুখ অধরাই থেকে যাবে।

শ্রীজিত মুখার্জীর “হেমলক সোসাইটি” মুভির কোয়েল মল্লিকের একজন নামকরা এবং তুমুল জনপ্রিয় শিল্পীর উদ্দেশ্য একটা ডায়ালগ ছিল – , আপনি হ্যাপি, রিচ, সাকসেসফুল, আপনি একজন নামকরা শিল্পী, আপনি এত ভাল গান করেন, এত ভাল গান লেখেন, আপনার প্রতিটা এ্যালবাম গোল্ডেন এওয়ার্ড পেয়েছে, আপনার অনেক জনপ্রিয়তা। আমার মন খারাপ হলে রোজ আপনার গান শুনতাম, খেতাম, ঘুমাতে যেতাম, ঘুম থেকে উঠতাম । একবার আত্মহত্যা করতে গেছিলাম আপনার গান শোনার পর আর করতে পারিনি।
আর আপনি আত্মহত্যা করতে এসেছেন। আপনি কেন আত্মহত্যা করবেন? আপনি আত্মহত্যা করতে পারেন না ……You can’t commit suicide…আপনার সুইসাইড করার কোন কারণ নাই …
উত্তরে তিনি বলেন- তাহলে বুঝেন, আমার কি চাপ? কেন আত্নহত্যা করতে পারি না? আলবদ পারি……
লেখক- প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।